নেপালে ভ্রমণের শীর্ষ ১০ স্থান

ভ্রমণ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০২:০৭ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণপিপাসুরা সব সময়ই নতুন নতুন স্থান ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। সব সময় তো আর কাঙ্খিত স্থানে ঘুরতে যাওয়া হয় না! তবে ভ্রমণের নেশায় যারা আসক্ত, তারা ঠিকই কোনো না কোনো উপায় বাতলে নেন স্বপ্নের ডেস্টিনেশনে যাওয়ার জন্য। অনেকে পাগলামিও করে বসেন!

নতুন বছর আসতেই ভ্রমণপিপাসুরা বেড়িয়ে পড়েছেন দিশে কিংবা বিদেশে। যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব আবারও বেড়েছে। তবে এখনো ভ্রমণের বিষয়ে তেমন কোনো বাধা-নিষেধ নেই। বরং করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাওয়া যাবে। তবে অবশ্যই মানতে হবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে অনেকেই নেপাল ভ্রমণে যাচ্ছেন! কেউ দলবেঁধে আবার কেউ পরিবার কিংবা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। তবে নেপাল ভ্রমণে কোথায় কোথায় ঘুরবেন তা কি জানা আছে? নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের এক গবেষণা উঠে এসেছে, নেপালের শীর্ষ ১০টি স্থানে কথা। যেসব স্থানে ২০২২ সালে পর্যটকেরা ভিড় করছেন-

১. সিন্ধুলিগাধি

সিন্ধুলিগাধি নেপালের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি সেই প্রাচীন দুর্গ যেখানে ১৭৬৭ সালে গুর্খা সৈন্যরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সৈন্যদের পরাজিত করেছিল। দুর্গটি আজও নেপালি সৈন্যদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সিন্ধুলিগাধি জেলার সদর দফতর সেখান থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পূর্বে ও কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪১৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ঐতিহাসিক দুর্গটি। সিন্ধুলিগাধিতে সারা সপ্তাহ ধরে পিকনিক ও পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। দুর্গটি নেপালের একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ কারণে সেখানকার রাস্তা ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

সিন্ধুলি থেকে দক্ষিণে রামেছাপ ও উত্তরে হিমালয় দেখতে পারবেন। স্থানটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যও বিখ্যাত। সিন্ধুলিগাপধিতে নেপাল সেনাবাহিনীর তৈরি জাদুঘরটিও দেখে আসতে ভুলবেন না। স্থানটি স্থানীয় জুনার ও কিউই ফলের জন্যও বিখ্যাত।

২. মুন্ডুম ট্রেক

মুন্ডুম ট্রেক খোটাং ও ভোজপুর জেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানটি সিলচুং পিকের ভিউপয়েন্ট পর্যন্ত অর্থাৎ ৪ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি মূলত একটি ট্রেইল।

যেটি ধরে এগিয়ে গেলে ডিকটেল বাজার থেকে শুরু করে চাখেওয়া, রাওয়া ধাপ, সালপা ভাঞ্জিয়াং, শিলচুং, হাঁসপোখারির মতো সুন্দর এলাকাগুলো পার হয়ে ভোজপুরে পৌঁছানো যায়।

ডিকটেল ও ভোজপুরে কিছু লজ আছে, তবে ট্রেকারদের তাদের নিজস্ব তাঁবু বহন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ট্রেইলটিতে একসঙ্গে ৮০০০ মানুষ এভারেস্ট, লোটসে, মাকালু, চো ওয়ু ও কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। বসন্ত ঋতু অর্থাৎ মার্চ থেকে মে সেখানে ভ্রমণের জন্য সেরা সময়।

৩. বরাহ ক্ষেত্র

বরাহ ক্ষেত্র হলো একটি তীর্থস্থান। যা নেপালের ধরন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সপ্ত কোশি ও কোকা নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। ব্রহ্ম পুরাণ, বরাহ পুরাণ ও স্কন্দ পুরাণসহ পুরাণে উল্লিখিত নেপালের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর মধ্যে একটির অবস্থান বরাহ ক্ষেত্রে। এটি মহাভারত মহাকাব্যেও উল্লেখিত আছে।

এটি পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরটি সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক উভয় ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। কার্তিক পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারত থেকে লোকেরা বিশেষ করে এখানে আসেন।

নেপালবাসীরা মকর সংক্রান্তির শুভ দিনে এই তীর্থস্থানে আসেন। জেট বোট পরিষেবা ও পাবলিক বাসের সুবিধা বরাহ ক্ষেত্রে সহজেই মেলে।

৪. অরুণ ভ্যালি

অরুণ ভ্যালি সাগরমাথা ও মাকালুর মধ্যে মাকালু-বরুন জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এটি একটি বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। যেখানে অত্যাশ্চর্য টেরেসড ল্যান্ডস্কেপসহ মরুভূমির দেখা পাবেন। যদিও স্থানটি পর্যটনবহুল নয়। কারণ এটি একটি ব্যতিক্রমী রুট, যা ট্রেকাররা আবিষ্কার করেছিলেন।

কাঠমান্ডু থেকে এক ঘণ্টার ফ্লাইটের পর তুমলিংটারে ট্রেক শুরু হয়। অরুন ভ্যালির পথে চলতে চলতে দেখা মিলবে রাই, শেরপা ও লিম্বু সম্প্রদায়ের বসতি। এটি একটি আশ্চর্যজনক ট্রেকিং অভিজ্ঞতা দেয়।

‘অরুণ III জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র’ অরুণ নদীর উপর তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে অরুণ নদীর উপর একটি ৭০ মিটার লম্বা ও ৪৬৬ মিটার দীর্ঘ কংক্রিটের মধ্যাকর্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানটি পূর্বাঞ্চলের মানুষের কাছে অন্যতম প্রিয় হয়ে উঠেছে।’

৫. ক্লিফ, কুশমা

নতুন বছর আসতেই নেপালি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা এরই মধ্যে পার্বত্য জেলার কুশমার বাঞ্জি জাম্প স্টেশন ‘দ্য ক্লিফে’ ভিড় করছেন। যেটি পোখরা থেকে দুই ঘণ্টার পথ।

পোখরাকে কুশমার সঙ্গে সংযোগকারী দুই লেনের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। কালি গন্ডাকি নদীর উপরে শ্বাসরুদ্ধকর ৫২৮ মিটার-দীর্ঘ ব্রিজ অতিক্রম করেন অনেকেই।

এই ব্রিজের সঙ্গে বাঞ্জি জাম্পিংয়ের সুবিধা আছে। যা বিশ্বের তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, কুশমায় ২২৮ মিটার উঁচু বাঞ্জি জাম্পিং সুবিধা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ।

বিশ্বের সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক বাঞ্জি জাম্পিং সুবিধা পাবেন চীনে (৩৭০.২৫ মিটার)। চীনের গুইঝোতে হুয়াংগুওশুতে বালিঙ্গে সেতুতে অবস্থিত এটি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়।

কালি গন্ডাকি গিরিখাত জুড়ে ঝুলন্ত সেতুটি রাশিয়ার সোচির ক্রাসনায়া পলিয়ানা উপত্যকার ওয়াকওয়ের একটি অনুলিপি।
যা ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের সময় ডিজাইন করা হয়েছিল। ক্লিফ কুশমা ও বাগলুং-এর কালি গণ্ডকি নদীর ঝুলন্ত সেতুর উপরে উচ্চতম ‘স্কাই সাইক্লিং’ ট্র্যাকিংয়েরও ব্যবস্থা আছে।

৬. চিটলাং

চিটলাং মাকওয়ানপুরের বিভিন্ন রিসর্ট ও হোমস্টে ব্যবসায়ে ধ্বস নামে করোনা মহামারির জন্য। তবে দীর্ঘ ২০ মাস পর নতুন বছরে ধীরে ধীরে বাড়ছে পর্যটক সংখ্যা।

কাঠমান্ডু থেকে আনুমানিক ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত চিটলাং। ১৯৫৬ সালে এটি প্রাচীন বাণিজ্য রুট ছিল, যা বাইরোড নামে পরিচিত।

ত্রিভুবন হাইওয়ে খোলার আগে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন অংশের প্রধান সংযোগ ছিল বাইরোড। তখন এটিকে বহির্বিশ্বে প্রথম মোটরযোগ্য রাস্তা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলো।

বর্তমানে যাত্রীরা রাজধানীতে পৌঁছানোর জন্য চিটলাং হয়ে ট্রেড রোড বা বাণিজ্য পথ ধরে হেঁটে যান। পায়ে চলা পথটি থানকোট থেকে শুরু হয় ও চন্দ্রগিরি পাসে উপত্যকার রিম ধরে উঠে যায়।

৭. খপ্তদ

খপ্তদ জাতীয় উদ্যান নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের একটি সংরক্ষিত এলাকা। এটি বাঝাং, বাজুরা, আছাম ও ডোটি ৪টি জেলা জুড়ে বিস্তৃত।

১৪০০ থেকে ৩৩০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বিস্তৃত খপ্তদ। বসন্ত (মার্চ-মে) ও শরৎ (অক্টোবর-নভেম্বর) পার্কটি দেখার সেরা সময়।

এই পার্কে কোনো লজ বা হোটেল নেই। ট্রেকারদের অবশ্যই তাদের নিজস্ব তাঁবু, খাবার ও অন্যান্য সরবরাহ সঙ্গে নিতে হবে।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড বলছে, সোশ্যাল মিডিয়াও নেপালি পর্যটকদের খপ্তদে যেতে প্রভাবিত করছে।

৮. বান্দিপুর

বান্দিপুর হলো একটি পাহাড়ি জনবসতি এলাকা। তানাহুন জেলার একটি গ্রামীণ পৌরসভা হলো বান্দিপুর। সংরক্ষিত এই এলাকাটি প্রাচীন সাংস্কৃতির চিহ্ন ধরে রেখেছে।

নেপালের এই স্থান ক্রমশ পর্যটকদের নজর কাড়ছে। সেখানকার মূল আকর্ষণ হলো প্রধান রাস্তার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি।

বান্দিপুরের পাহাড়ের চূড়ায় গ্রামবাসীরা বসবাস করে। যা সত্যিই বিস্ময়কর। এ কারণেই সংরক্ষিত এই এলাকায় পর্যটকরা ভিড় করে।

ভ্রমণকারীরা সেখানে গেলে ট্রেকিং, পাহাড়ি সংস্কৃতি, পাহাড়ের দৃশ্য ও হাইকিংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।

বান্দিপুরের জনপ্রিয় আকর্ষণগুলো হলো পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের গ্রাম, সবুজ বন, পাহাড়ের চূড়ার মন্দির।

এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও নেপালের বৃহত্তম ‘সিদ্ধ গুহা’র অবস্থানও এখানেই। বন্দিপুর টুন্ডিখেলের থানি মাই মন্দিরটি একটিও পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।

যেখানে দাঁড়ালে দর্শনার্থীরা একনজরেই বান্দিপুর শহর, অন্নপূর্ণা রেঞ্জ ও চারপাশের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
করোনা মহামারিতে ব্যবসায়ে ভাটা পড়ায় বর্তমানে বান্দিপুরের হোটেল ও লজগুলো দর্শনার্থীদের জন্য প্রচুর ছাড় দিচ্ছে।

৯. কুড়ি গ্রাম, কালিনচোক

এটি কিন্তু বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম নয়। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হলো কুড়ি নামক গ্রামটি।

দোলাখা জেলার কালিনচোকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৮৪২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কুড়ি গ্রাম। হিমালয় পর্বতমালার মনোমুগ্ধকর ল্যান্ডস্কেপ ও চমত্কার প্যানোরামিক দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।

পাশাপাশি শীতকালে তুষারও উপভোগ করা যায় সেখানে। কালিনচোকে ডিসেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত বরফের দেখা মেলে।

তুষারপাত হলে কুড়ি গ্রামের চূড়ায় জিপ, বাস ও গাড়ি পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন যানবাহনের চাকার চারপাশে চেইন মোড়ানো হয় ও দর্শনার্থীদের বহন করার জন্য অত্যন্ত অভিজ্ঞ ড্রাইভার জিপ চালান।

১০. লো মানথাং

লো মানথাং হলো নেপালের একটি প্রাচীর ঘেরা শহর। যা ৪০০০ মিটার উচ্চতায় উত্তর মধ্য নেপালের মুস্তাংয়ে অবস্থিত। এই প্রাচীন রাজধানীতে এখনো মুস্তাংয়ের শেষ রাজার বাড়িটি আছে।

যদিও এই স্থানে সব সময়ই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তাই বর্ষাকালেও আপনি যেতে পারবেন লো মানথাংয়ে। তবে উঁচু এ স্থানে যেতে হলে ভ্রমণকারীদের একটি বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।

১৫ শতকে নির্মিত প্রাচীরঘেরা এই শহরের মধ্যে একটি মঠও আছে। এতে অমূল্য প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও বুদ্ধের মূর্তি আছে। কাগবেনির উত্তরে অবস্থিত আপার মুস্তাং ভ্রমণের জন্য বিদেশিদের অনুমতির প্রয়োজন হয়।