সোনাদিয়া দ্বীপ: এক অপরূপ দর্শনীয় স্থান

ভ্রমণ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:৩৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২১ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার গিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের অপরূপ এক দ্বীপ হলো সোনাদিয়া।

কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এটি।

জানা যায়, কয়েক শত বছর আগে পর্তুগীজ জলদস্যুদের হামলায় একটি স্বর্ণবোঝাই জাহাজ ডুবে যায় এ দ্বীপে। পরবর্তীতে জাহাজের ধ্বংসস্তূপকে ঘিরে জেগে ওঠে এই অপরূপ সোনাদিয়া দ্বীপ।

কক্সবাজারের আকর্ষণীয় স্থানসমূহের মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপ অন্যতম ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে গঠিত দ্বীপটি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।

তিনদিকে নীল সাগর, লাল কাঁকড়া, কেয়া বন, সব মিলিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করেছে। যা দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমায় এ দ্বীপে। বিভিন্ন অতিথি পাখি ও জলচর পাখিরও দেখা মিলবে সোনাদিয়া দ্বীপ।

এখানকার সূর্যাস্ত আরও মনোমুগ্ধকর। এই দ্বীপ ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা হতে পারে। বিশেষ করে চাঁদনী রাতে সোনাদিয়ার সৈকতে ক্যাম্পিং আর বারবিকিউ পার্টি করে যেন সব আনন্দকে ছাড়িয়ে যায়।

ক্যাম্পিংয়ের জন্য সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। এই দ্বীপের চা অত্যন্ত সাধারণ মানের হলেও এর স্বাদ জিভে লেগে থাকে পর্যটকদের।

সোনাদিয়া দ্বীপ দেশের প্রধান শুটকি মাছ উৎপাদন কেন্দ্র। শীতে হাজার হাজার জেলে ঘাঁটি গেড়ে মাছ শুটকি বানানোর জন্য শুকাতে দেয় এই দ্বীপে। মাছ শুকানোর জন্য বিখ্যাত সোনাদিয়া দ্বীপ। একসময় গোলাপি মুক্তার জন্য এই দ্বীপের খ্যাতি ছিল।

সোনাদিয়া দ্বীপে কোথায় থাকবেন ও খাবেন?

এই দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য কোনো আবাসিক হোটেল নেই। খাওয়ারও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। তবে স্থানীয়দেরকে টাকা দিলে তারা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আর রাত্রিযাপন করতে চাইলে স্থানীয়দের ঘরেই থাকতে হবে। তবে রাত্রিযাপনের আগে নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখুন।

সোনাদিয়া দ্বীপে কীভাবে যাবেন?

দেশের যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। তারপর কক্সবাজার কস্তুরী ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যেতে হবে মহেশখালী। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে কলাতলী বা লাবণী পয়েন্ট থেকে কক্সবাজারের ৬ নং ঘাট এ আসতে হবে।

তারপর সেখান থেকে মহেশখালী যাওয়ার জন্যে স্পীড বোট পাবেন। ভাড়া পড়বে প্রতিজন ৭৫ টাকা। মহেশখালী ঘাটে পৌঁছতে সময় লাগবে ১২-১৫ মিনিট। স্পীড বোটে চড়তে ভয় লাগলে কাঠের নৌকাতেও চড়তে পারেন। ভাড়া পড়বে ৩০ টাকা। সময় লাগবে ৪৫-৫০ মিনিট।

মহেশখালী ঘাটে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে গোরকঘাটা বাজারে। ভাড়া লাগবে ২০ টাকা। এরপর আপনাকে যেতে হবে ঘটিভাঙ্গায়, মহেশখালীর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙার দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। ৩-৪ জন হলে একটা সিএনজি নিয়ে যেতে পারেন ঘটিভাঙ্গা, ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা।

সেখান থেকে আবার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সোনাদ্বিয়া দ্বীপে যেতে হয়। ঘটিভাঙা নেমে খেয়া নৌকায় সোনাদিয়া চ্যানেল পার হলেই সোনাদিয়া দ্বীপ।

বোট থেকে নেমে কাছেই বন বিভাগের একটা বিল্ডিং আছে। সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন। এরপর স্থানীয়দের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে চলে যেতে পারেন সৈকতে। ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই দেখা পাবেন সমুদ্র সৈকতের।

আপনি চাইলে কক্সবাজার থেকেও সরাসরি স্পিডবোট রিজার্ভ করে সোনাদিয়া দ্বীপে যেতে পারবেন। যদি ঝামেলা ছাড়া দ্রুত সোনাদিয়া যেতে চান তাহলে একটু খরচ বেশি হলেও এ উপায়ে যাওয়া উত্তম।

মনে রাখবেন, কক্সবাজার থেকে একদিনে সোনাদিয়া ঘুরে আসা সম্ভব না। এজন্য হাতে দুদিন সময় রাখুন। তাহলে সোনাদিয়ার পাশাপাশি মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া, বৌদ্ধমন্দির, চরপাড়া, লবণের মাঠ, পানের বরজও দেখে আসতে পারবেন।