বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১২:০৬ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সাংবাদিক ও নিবন্ধকার, বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক।

তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘নীললোহিত’, ‘সনাতন পাঠক’ ও ‘নীল উপাধ্যায়’ ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। 

গ্রামীণ এবং নগর জীবনের ছোট-বড় নানা সমস্যা তিনি তার গল্পে-উপন্যাস-কবিতায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন। 

সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, দমদম মতিঝিল কলেজ ও সিটি কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজের পাঠ চুকানোর পর ১৯৫৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি নেন। 

এরই মধ্যে লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে সুনীলের। ১৯৫৩ সাল থেকে তার সম্পাদনায় প্রকাশ হতে থাকে সাহিত্য পত্রিকা কৃত্তিবাস। 
সুনীলের লেখা ‘নিখিলেশ’ আর ‘নীরা’ সিরিজের কবিতাগুলো তরুণদের মুখে মুখে ছিল বহুদিন। সুনীলের প্রথম কবিতা ‘একটি চিঠি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে, দেশ পত্রিকায়। বয়স তখন ১৭ বছর। সে বছরই ‘আগামী সাহিত্য’ নামের একটি সাহিত্যপত্রের সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’য় তার লেখা ‘তুমি’ কবিতাটি প্রকাশের পর আলোচনায় উঠে আসেন সুনীল। 

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। একই নামে পরে একটি উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। প্রথম কবিতার বই প্রকাশের প্রায় এক দশক পর ১৯৬৬ সালে বাঙালি পাঠকের হাতে আসে সুনীলের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’। 

সুনীলের বাবা তাকে টেনিসনের একটি কবিতার বই দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দুটি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল তিনি যাতে দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তাই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, বিড়ি ফুঁকত সুনীল তখন পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেঁয়ে উঠলে তিনিই নিজেই লিখতে শুরু করেন। ছেলেবেলার প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করা লেখা কবিতাটি তিনি দেশ পত্রিকায় পাঠালে তা ছাপা হয়। 

সুন্দরের মন খারাপ মাধুর্যের জ্বর, সেই মুহূর্তে নীরা, স্মৃতির শহর, সুন্দর রহস্যময়, আমার স্বপ্ন, আমি কি রকম ভাবে বেঁচে আছি, ভালোবাসা খণ্ডকাব্য, নীরা, হারিয়ে যেও না, অন্য দেশের কবিতা, ভোরবেলার উপহার, সাদা পৃষ্ঠা তোমার সঙ্গে, হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভু কাব্যগ্রন্থগুলো এখনো পাঠকপ্রিয়। 

পাঠক সুনীলের কাছ থেকে পেয়েছে শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ, সেই সময়, প্রথম আলো ও পূর্ব পশ্চিমের মতো প্রায় দুই শতাধিক গ্রন্থ। 

সুনীলের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে, দেশ পত্রিকায়। এরপর অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, কবি ও নর্তকী, একা এবং কয়েকজন, স্বর্গের নীচে মানুষ, আমিই সে, মেঘ বৃষ্টি আলো, রক্তমাংস, দুই নারী, স্বপ্ন লজ্জাহীন, সোনালী দুঃখ, প্রথম প্রণয় প্রকাশিত হয়। 

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে সুনীল লেখেন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী। ‘শাজাহান ও তার নিজস্ব বাহিনী’, ‘আলোকলতার মূল’ নামে দুটি গল্পগ্রন্থও রয়েছে তার। ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ ও ‘রাশিয়া ভ্রমণে’ তুলে এনেছেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। 

২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর মারা যান সুনীল। জন্ম ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মাদারীপুরে।