বর্তমানে ‘ভুলের মাশুল’স্বরূপ অবস্থান সংকটে পড়েছে জামায়াত

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:৫৯ এএম, ৮ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পরিকল্পনা ছিল এক, কিন্তু হলো আরেক। জামায়াত চেয়েছিল হেফাজতের ঘাড়ে ভর করে সরকারের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিশোধ নিয়ে রাজনৈতিক এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু শেষ অবধি সে আশায় গুড়ে বালি হলো। হলো হিতে বিপরীত। সেই সঙ্গে ‘অন্ধের যষ্ঠি’ হিসেবে নিজেদের যেটুকু রাজনৈতিক অবস্থান ছিলো, তাও হারালো দলটি। ফলে বর্তমানে ‘ভুলের মাশুল’স্বরূপ অবস্থান সংকটে পড়েছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ।

বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, দলের যাত্রা শুরু থেকেই তেমন জনপ্রিয়তা ছিলো না জামায়াতের। পরে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সরকারগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা, আর্থিক সক্ষমতা এবং কিছু ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সমর্থনের মাধ্যমে যাও একটা অবস্থান গড়েছিলো, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাও বিলীন হয় স্বাধীনতাবিরোধী এই রাজনৈতিক দলটির। পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যখন একে একে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়া শুরু করে, তখন থেকেই ভাটা পড়তে থাকে তাদের দলীয় রাজনীতি। তবে বুকে জ্বলতে থাকে প্রতিহিংসার আগুন।

পরবর্তীতে দাউ দাউ করে জ্বলা সেই আগুন রূপ নেয় সহিংসতায়, জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতিতে। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের ক্যাডার বাহিনী প্রকাশ্যে গাড়ি পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে। শুরু করে আতঙ্কের রাজনীতি। তবে সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে বেশিদিন তাদের সেই যাত্রা অব্যাহত থাকেনি। এর মধ্যে তাদের জন্য এলো আরেকটি দুঃসংবাদ, দলীয় নিবন্ধন বাতিল।

শুরু হলো নতুন মিশন। বিএনপির কাঁধে ভর করে নেপথ্যে থেকে নির্বাচন ও সহিংসতায় অংশ নেয়া। কিন্তু সেসব খুব একটা কাজে না দেওয়ায় সর্বশেষ ‘দাবার গুটি’ হিসেবে তারা চেয়েছিলো হেফাজতের নেপথ্যে থেকে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালানো। কিন্তু তাণ্ডব চললেও আলোচিত হলো হেফাজত, বিলীন হলো জামায়াত। অথচ অর্থায়ন ও লোকবল প্রদান সহ কী করেনি তারা!

এই ঘটনার জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করে নাম প্রকাশে অনচ্ছুক একজন জামায়াত নেতা বাংলা নিউজ ব্যাংকের এই প্রতিবেদককে বলেন, নরেন্দ্র মোদির বাংলোদেশ সফরের বিরোধিতা করবেন ভালো কথা, তবে হেফাজতের নেপথ্যে থেকে কেন? তাদের পেছনে অর্থায়ন কি কম করেছে জামায়াত? কিংবা সহিংসতা সৃষ্টিতে তাদের থেকে কম মানুষ রাস্তায় নেমেছে? তাহলে আজ সব জায়গায় তাদের নাম কেন হচ্ছে? সব ক্রেডিট কেন তাদের পকেটে গেলো?

ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আরও বলেন, আগে মানুষের মধ্যে জামায়াতের যে ধর্মীয় রাজনৈতিক অবস্থান ছিলো সেটিও এখন আর নেই। সম্পূর্ণ চলে গেছে হেফাজতের দখলে। এর মাশুল কে দেবে? আর কে-ই বা করবে নিজেদের হারানো অতীত পুনরত্থান?

এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের ধূর্ত ধর্ম ব্যবসায়ী নেতারা ভেবেছিলেন, পেছন থেকে হেফাজতকে ইন্ধন দিলেই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বেকায়দায় পড়বে সরকার। ফায়দা হবে নিজেদের। কিন্তু সরকার যে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, তা তারা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। ভাবেননি হেফাজতের পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়লে ক্ষতি বৈ লাভ হবে না। আর সেটাই হয়েছে তাদের সঙ্গে, নেপথ্যের রাজনীতিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াতের জন্য। ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতেও তারা আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এমনকি যৎসামান্য যে সাংগঠনিক শক্তি আছে জামায়াতের তাও অচিরেই বিভাজিত হবে হেফাজত ইস্যুতে।