নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু

নিউজ ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ২ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেষ সময়ে নির্বাচনি প্রচারণা ও দাফতরিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। ১৯৭৩ সালের এই দিনে তিনি বেশকিছু ফাইল দেখার পাশাপাশি অনেক সংগঠনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মার্চের ৩ তারিখে সুনামগঞ্জে নির্বাচনি সফরে যাওয়ার নির্ধারিত দিন ধার্য ছিল।

সুনামগঞ্জ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুনামগঞ্জে জনসভায় ভাষণ দেবেন। ৩ মার্চ সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সেখানে যাবেন এবং বেলা সাড়ে ১১টায় জনসভায় ভাষণ দেবেন। তিনি ওই দিন বিকালে ঢাকায় ফিরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী এদিন (২ মার্চ) গণভবনে এক দারুণ কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত করেন। তিনি অনেক ফাইল দেখার পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি কাজের মাঝে অসম্ভব কর্মব্যস্ত দিন কাটান। এছাড়া এই দিনে কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও শ্রমিক গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ দান করেন। ঢাকা সদরঘাট টার্মিনাল শ্রমিক লীগ ও শ্রমিক গণভবনে এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে দুটো রুপোর নৌকা উপহার দেন।

শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়— তার নিশ্চয়তা বিধানের সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত করার যে কোনও চেষ্টা নস্যাৎ করা হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মান্নান একথা জানান। বিপিআইএ’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, ‘এ দায়িত্ব পালনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পুরোপুরি সক্রিয় করা হয়েছে। রক্ষীবাহিনী এরইমধ্যে তাদের কর্তব্য স্থানে রওনা হয়ে গেছে। ভোটদানের জন্য সকল ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাতে হাজির হতে পারেন, সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ভোটদান কেন্দ্রের নির্বাচনি এলাকায় অবস্থিত শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করবে।’

আব্দুল মান্নান আরও বলেন, ‘যেসব পুলিশ, রক্ষীবাহিনী ও বিডিআর সদস্যদের নিয়োগ করা হচ্ছে, তাদেরকে কোনোরকম ভয়-ভীতি বা আনুকূল্য না করে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন মাত্র পাঁচ দিন বাকি। পুলিশ, রক্ষীবাহিনী ও আনসাররা যাতে ৭ মার্চ সকাল আটটায় ভোট শুরুর ৭২ ঘণ্টা আগে যথাস্থানে পৌঁছাতে পারে, সেজন্য কারা ভোটকেন্দ্রের  উদ্দেশে রওনা শুরু করে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮৮ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে ১১টি নির্বাচনি এলাকায় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং জাতীয় সংসদ-৭০ এর পাবনা-১২ আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই এলাকায় নির্বাচন কার্যবিধি স্থগিত রাখা হয়েছে।

১৯৭২ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের ৭৪(৪) ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে আইনত অপরাধী বলে সাব্যস্ত করবেন, যদি তিনি একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিকবার ভোট দেন ও ভোটদানের সুযোগ পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যালট কাগজের জন্য আবেদন করেন।

নির্বাচনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার দেশব্যাপী প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নির্বাচন কমিশনার বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে একথা জানান।

৭ মার্চ প্রমাণ করবে বঙ্গবন্ধুর পেছনে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী শামসুল হক এইদিনে পুরুষ ও মহিলা উভয় ভোটারদের প্রতি ৭ মার্চ আসন্ন নির্বাচনে শতভাগ ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে আহ্বান জানান। বাসস পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বাসাবো শহীদ আলাউদ্দিন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় সমবায়মন্ত্রী প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। তিনি শতকরা ১শ’ ভাগ ভোট দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে একশ্রেণির মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে রয়েছে ও বাংলাদেশের পক্ষে নেই’ প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর এমন বক্তব্যকে চূড়ান্তভাবে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য এটা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মুষ্টিমেয় লোক তাদের পাক-চীনা প্রভুদের দ্বারা অর্থপুষ্ট হয়ে আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল এবং আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে।’ এসব রাষ্ট্রবিরোধী ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে তোফায়েল

এই সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘৭ মার্চের নির্বাচন প্রমাণ করে দেবে যে, বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে চক্রান্তকারী বিশ্বাসঘাতকদের ঠাঁই নেই এবং জনগণ বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।’ আওয়ামী লীগের গত ২৫ বছরের ভূমিকা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। এটা হচ্ছে জনগণের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করার একটি দল।’