কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানা কেন প্রয়োজন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

নতুনের সাথে আমরা

প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

কোলেস্টেরল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান হৃদরোগ, স্ট্রোক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। আপনি স্বাস্থ্য সচেতন লোকদের একজন হলে এটা সম্ভবত জানা আছে যে, কোলেস্টেরলকে স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, কোলেস্টেরলের স্বাস্থ্যকর পর্যায় হলো- লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) ১০০ এমজি/ডিএলের কম, হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন ৬০ এমজি/ডিএলের বেশি এবং ট্রাইগ্লাইসেরাইডস ১৫০ এমজি/ডিএলের কম।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজিস্ট দিয়ার্দ্রি ম্যাটিনা বলেন, ‘কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি নাকি কম তা জানা ছাড়াও স্বাস্থ্যের উন্নতি ও রোগপ্রতিরোধে কোলেস্টেরলের ভূমিকা সম্পর্কে বোধগম্যতা একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে অবদান রাখে। আপনি কোলেস্টেরল সম্পর্কে যত বেশি জানবেন, চিকিৎসকের সঙ্গে তত তথ্যবহুল আলোচনা করতে পারবেন। এটা চিকিৎসককে সহজে হৃদরোগের ঝুঁকি নিরূপণে সাহায্য করবে এবং তিনি অধিক কার্যকরভাবে চিকিৎসা পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন।’

* টোটাল কোলেস্টেরলের প্রত্যেকটা উপাদান সম্পর্কে জানা থাকতে হবে
রক্ত পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পর রোগীরা সাধারণত টোটাল কোলেস্টেরলের ওপর ফোকাস করেন। কিন্তু ডা. ম্যাটিনার মতে, টোটাল কোলেস্টেরল কত তা জানার চেয়ে এই স্কোর গঠনকারী প্রত্যেকটা উপাদান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অধিক গুরুত্বপূর্ণ। একটি সাধারণ কোলেস্টেরল টেস্টে এই তিনটি উপাদান পরিমাপ করা হয়: এলডিএল, এইচডিএল ও ট্রাইগ্লাইসেরাইডস।

এলডিএল: এটাকে খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি ধমনীতে প্লেক বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত এলডিএলের মাত্রা ১০০ এর কমকে আদর্শ ধরা হয় এবং এই স্কোর বেড়ে ১৬০ এর উপরে ওঠে গেলে তাকে উচ্চ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু আপনার ইতোমধ্যে হৃদরোগ শনাক্ত হলে এলডিএলের মাত্রাকে ৭০ এর নিচে রাখা উচিত এবং সম্ভব হলে আরো কমানোর চেষ্টা করুন, বলেন মায়ো ক্লিনিকের কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামের মেডিক্যাল ডিরেক্টর রেন্ডাল থমাস।

এইচডিএল: এটাকে উপকারী কোলেস্টেরল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এই কোলেস্টেরল ধমনীর এলডিএল কোলেস্টেরলকে পুনরায় লিভারে নিয়ে আসে। লিভারে এলডিএল কোলেস্টেরল ভেঙে শরীর থেকে অপসারিত হয়ে যায়। ডা. থমাসের মতে, পুরুষদের জন্য এইচডিএলের আদর্শ মাত্রা হলো ৪০ থেকে ১০০ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০।

ট্রাইগ্লাইসেরাইডস: এটা হলো রক্তের এক ধরনের চর্বি। এটাকে শরীর শক্তির জন্য ব্যবহার করে। ডা. থমাস বলেন, অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রে ট্রাইগ্লাইসেরাইডসের স্কোর ১৫০ এর উপরে ওঠলে উচ্চ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ১০০০ এর উপরে ওঠলে তা হবে বিপজ্জনক উচ্চ মাত্রা। উচ্চ ট্রাইগ্লাইসেরাইডস এবং কম এইচডিএল কোলেস্টেরল অথবা উচ্চ এলডিএলের সমন্বয় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উচ্চ করে।

আপনার কোলেস্টেরল আপনাকে কতটা হৃদরোগের ঝুঁকিতে রেখেছে তার সর্বাধিক নির্ভুল চিত্র পেতে এই তিন উপাদানের স্কোরকে যোগ করে যোগফল থেকে এইচডিএল সংখ্যা বিয়োগ করতে পারেন। সিডিসির মতে, যে বিয়োগফল পাওয়া যাবে তা ২৫০ এমজি/ডিএল বা আরো কম হলে ভালো হয়।

* কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
হার্ট অ্যাটাকের জন্য কোলেস্টেরলের মাত্রা অবধারিতভাবে উচ্চ হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ডা. ম্যাটিনা বলেন, ‘বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে কেবল কোলেস্টেরল কণাই নয়, কোলেস্টেরলের আচরণও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে থাকে। অনেক মানুষের কোলেস্টেরল সংখ্যা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, কারণ তাদের কোলেস্টেরল এমনভাবে আচরণ করেছে যেন তা প্রদাহমূলক কিছু।’ তিনি আরো জানান, ‘আপনার রক্তে প্রদাহমূলক কোলেস্টেরল কণা আছে কিনা তা জানার সর্বোত্তম উপায় হলো উচ্চ সংবেদনশীল সি-রিয়্যাক্টিভ (সিআরপি) টেস্ট করা। সাধারণ কোলেস্টেরল প্যানেলে সি-রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন চেক করা হয় না।’

* ভালো খাবারে কোলেস্টেরল স্কোরে উন্নতি আসলেও ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে
কোনো সন্দেহ নেই যে, কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস শরীরে ট্রাইগ্লাইসেরাইডস ও এলডিএল কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং দ্রুত এইচডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- স্যাচুরেটেড ফ্যাটস, সরল কার্বোহাইড্রেট, ধূমপান, শরীরচর্চার অভাব এবং অত্যধিক ওজন বা স্থূলতা কোলেস্টেরলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করতে ডায়েট থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের সংযোজন ঘটাতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ রয়েছে এমন খাবার খেতে হবে, বেশি করে শরীরচর্চা করতে হবে ও ধূমপান পরিহার করতে হবে।

আপনার কোলেস্টেরল প্রোফাইলের উন্নয়ন ঘটাতে খাবার ও জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনলেও এখনো কোলেস্টেরলের ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। তাই এটা স্মরণে রাখতে হবে যে, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বন্ধ করে দেয়া উচিত হবে না, খাদ্যতালিকা বা জীবনধারায় যতই পরিবর্তন আনেন না কেন। ইতোমধ্যে যাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাদের জন্য একথার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তবে জীবনযাপনে বড় পরিবর্তনে ওষুধের ডোজ বা পরিমাণে প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ আগে যতটুকু ওষুধ দরকার হতো এখন তার চেয়ে কম ওষুধ ব্যবহার করলে চলতে পারে। নিজের বিবেচনায় ওষুধ কমাবেন না, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

* কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহায়ক হতে পারেন
রোগ বিবেচনায় বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক হলো হৃদরোগ। ডা. ম্যাটিনার মতে, ‘হৃদরোগীদের অধিকাংশেরই উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে। এসব কোলেস্টেরল সঞ্চিত হয়ে রক্তনালীকে অনমনীয় বা সংকীর্ণ করে ফেলে এবং প্রদাহ বৃদ্ধি করে। অপকারী কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা হার্টের যে ক্ষতি করে তা সহজেই সারিয়ে তোলা যায় না বলে আমরা জানতে পেরেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা যা করতে পারি তা হলো শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ও আরো শোচনীয় অবস্থা প্রতিরোধ করা। অর্থাৎ কোলেস্টেরল জনিত হৃদরোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধই মুখ্য বিষয়। প্রতিরোধ প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন, ততই মঙ্গল।’

কোনো নিকটাত্মীয়ের ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাক হলে অল্প বয়স (এমনকি আপনার বয়স ২০ বছর হলেও) থেকেই কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো ভালো। হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও গর্ভবতী নারীদের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন ডা. ম্যাটিনা, কারণ গর্ভাবস্থার কিছু পর্যায়ে (যেমন- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা খিঁচুনি) হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। লুপাস বা বাতরোগের মতো অটোইমিউন ডিজিজ জনিত দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রা উচ্চ না হলেও।

তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অথবা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন। তিনি আপনার কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের অন্যান্য রিস্ক ফ্যাক্টর বিবেচনা করবেন এবং আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে কার্যকরী পরামর্শ দিতে পারেন। হৃদরোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিকে যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, হার্ট অ্যাটাকের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর সম্ভাবনা তত বাড়ে। মনের মধ্য একথাকে প্রোথিত করুন: নিঃসন্দেহে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।