গিবত পরনিন্দা করার ভয়াবহ পরিণতি
ধর্ম ডেস্ক

গিবত পরনিন্দা করার ভয়াবহ পরিণতি
বিনা প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ- ক্রটি বর্ণনা করা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হবে, তাকেই শরীয়তের পরিভাষায় গিবত বা পরনিন্দা বলে।
বর্তমান সময়ে গিবত একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মানুষ একজনের দোষ- ক্রটি অন্য মানুষের কাছে বলে বেড়ানোতে তৃপ্তি ও আনন্দ অনুভব করে থাকে।
অথচ গিবত এমন এক বদভ্যাস যা পুরো সমাজকে ধবংস করে দেয়। গিবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান। এটা বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন – মুখের দ্বারা, লেখনির দ্বারা, অঙ্গ- প্রতঙ্গের দ্বারা।
আবার এটা মুসলিম – অমুসলিম যে কারো ব্যাপারে হতে পারে। যদি বর্ণিত দোষগুলো ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবে তা গিবত হবে, আর যদি তা ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান না থাকে তবে তা হবে অপবাদ।
একটি হাদীসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দরভাবে গিবতের পরিচয় বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবাগণকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা কি জান গিবত কি? সাহাবাগণ উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
" ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ " . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ قَالَ " إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ " .
‘গিবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। জিজ্ঞেস করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে এটাও কি গিবত হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে সেটাই গিবত। আর তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে সেটা হবে তোহমাত। অর্থাৎ মিথ্যা অপবাদ। (সহিহ মুসলিম: ৬৪৮৭)
গিবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান।
ইরশাদ হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيراً مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার গেশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। [সুরা হুজুরাত - ৪৯:১২]
একজন মু’মিনের সম্মান ও মর্যাদা বাইতুল্লাহ বা কা’বার সম্মান ও মর্যাদার চেয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট অনেক বেশি।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ صَعِدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَنَادَى بِصَوْتٍ رَفِيعٍ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللَّهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِي جَوْفِ رَحْلِهِ " قَالَ وَنَظَرَ ابْنُ عُمَرَ يَوْمًا إِلَى الْبَيْتِ أَوْ إِلَى الْكَعْبَةِ فَقَالَ مَا أَعْظَمَكِ وَأَعْظَمَ حُرْمَتَكِ وَالْمُؤْمِنُ أَعْظَمُ حُرْمَةً عِنْدَ اللَّهِ مِنْكِ .
ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে উঠে চিৎকার দিয়ে বললেন, হে ঐ জামাআত, যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মাজবুত হযনি! তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবেনা এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ্ তাআলা প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভেতরে অবস্থান করে থাকলেও।
বর্ণনাকারী (নাফি) বলেন, একদিন ইবনু উমার (রা.) বাইতুল্লাহ বা কাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কতই না ব্যাপক ও বিরাট! তুমি কতইনা সম্মানি তা কিন্তু তোমার চেয়েও মু’মিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ্ তালার কাছে অনেক বেশি। জামেআত-তিরমিজি, হাদিস নং ২০৩২ হাদিসের মান: হাসান হাদিস।
সহিহ বুখারী শরিফে ইরশাদ হয়েছে:
قَالَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا ".
আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬০৬৪।
পরনিন্দার কাফফারা সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, গিবতের কাফফারা হল, তুমি যার গিবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। যেমন এভাবে বলা, হে আল্লাহ তুমি আমার এবং তার গুনাহ মাফ করে দাও, (বায়হাকি শরিফ)।
দুনিয়াতে গিবতের সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে- মানুষের মধ্যে একতা নষ্ট হয়, অন্তরে অন্যের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়, ভালোবাসা ও সম্প্রীতি হারিয়ে যায়। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, ঘৃণিত এ গোনাহ থেকে নিজকে বিরত রাখা এবং একে-অন্যের কল্যাণ কামনা করা।
- জুমার দিনে যে দোয়া কবুল হয়
- কোরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফজিলত
- ইসলাম ছেলেদের লম্বা চুল রাখা বিষয়ে কি বলে?
- ‘নফসের খাহেশাত থেকে নিজকে বাচানোর উপায়’
- যেভাবে বিশ্বনবী সাহায্য লাভের জন্য দোয়া করতে বলেছেন
- লাইলাতুল কদর তালাশ করুন...
যে রাতের আমল ৮৩ বছর চার মাসের সমান - দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকার আমল
- মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে গোপন পাপ
- কেয়ামত ঘনিয়ে আসছে, বোঝা যাবে এসব আলামতে
- পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা ১৪ অক্টোবর